পারুলি’র রমরমা মাদক ব্যবসা

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসা হিদের মোদে একজন পারুলি। প্রায় ২ যুগ ধরে ধারাবাহিক ভাবে পুরো শহরের মাদক বানিজ্য করে আসছে পারুলি। পূর্বে বেশ কয়েকবার মাদকের বড় চালানসহ গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে ধরা ছোঁয়ার বাইরে!

তথ্য বলছে, পারুলি ফতুল্লার মাসদাইরসহ আশপাশের এলাকা গুলোতে নিয়মিত ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা বিক্রি করেছেন। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো তালিকা ভুক্ত এ মাদক সম্রাজ্ঞী সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছিলো। অভিযোগ রয়েছে, পারুলি ১৬ সালের পর বেশ কয়েকবার পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলো। তবে প্রতিবারই দায়িত্বে থাকা অভিযান টিমের অসাধু কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে মেনেজ করে রক্ষা পায়। গোপন সূত্রে জানা গেছে, গত ঈদুল ফিতরের আগে রমজানের শেষের দিকে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির একটি টিম পারুলিকে মাসদাইর এলাকা থেকে আটক করে কালো রঙের গাড়িতে তুলে নেন। দীর্ঘদিন পর পারুলি আটক হয়ায় সাধারন মানুষ অনেকটা স্বস্তি ফিরে পায়।সে সময় টিমের দায়িত্বে থাকা অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা ঘুষ লেনদেন করে ছেড়ে দেন।

অনুসন্ধান বলছে, পারুলি পুরো ফতুল্লার চিহ্নিত ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারিদের একজন। ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ একাধিক মাদক মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি এ নারী মাদক সম্রাজ্ঞী। সে মামলা গুলো বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এমনকি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি বোর্ডে ঝুলানো আছে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেপ্তারের ছবি। এছাড়াও ধারাবাহিক ভাবে বেশ কয়েকটি মাদকের বড় চালানসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলো ফতুল্লার চিহ্নিত মাদক কারবারি পারুলি। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি হলেও ধারাবাহিক ভাবে মাদক কারবার চলমান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারুলি’র দু’জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি আছে। আর সেই দুই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন সেলস ম্যানরা ফতুল্লার বেশ কয়েকটি স্পটে মাদক বেচা- বিক্রি করে থাকেন। এক কথায় পারুলি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে নতুন কৌশলে দু’জন ব্যক্তির মাধ্যমে পুর মাদক কারবার পরিচালনা করে আসছে। তবে কৌশল অবলম্বন করে মাদক কারবার করে থাকলেও চলমান মাদক স্পটের মুলহোতা পারুলি তা জনসাধারণের জানার বাকি নেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইর, গুদারাঘাট, জামালের গ্যারেজসহ ফতুল্লার বেশ কয়েকটি স্পটে দিনে- রাতে প্রায় ২৪ ঘন্টাই প্রকাশ্যে হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করেন তার নিয়ন্ত্রণ সেলসম্যান’রা। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন মাদক বিক্রেতাদের পাইকারি মাদক সাপ্লাই দেন পারুলি।

পারুলির প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে যুবসমাজ নষ্ট করায় এলাকার সাধারন মানুষ অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এলাকাবাসির অভিযোগ, পারুলি মাসদাইরসহ ফতুল্লার যুবসমাজকে নষ্ট করছে। তাদের ক্ষোভ, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদের সামনে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করেন পারুলির লোকজন। বিভিন্ন সময় মাদক বিক্রি নিয়ে হট্টগোল লেগে যায়। এমনকি মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে। আর এসব বিষয় এলাকার অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই এড়িয়ে যায়।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, পারুলি প্রকাশ্যে মাদকের স্পটে মাদক বিক্রি করলেও আইন-সৃঙ্খলা বাহিনী কেনো ব্যবস্থা নেয় না? নাকি পারুলিকে খুঁজে পায় না কেউ?

এলাকাবাসি বলেন, জেলা পুলিশ ও পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা’র কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি এখনই পারুলিসহ তার লোকজনকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনলে ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

এ বিষয় ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নুরে আজম বলেন, আমরা নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকি। শুধু পারুলি না যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকবে অচিরেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, মাদক সমাজ থেকে দুর করতে শুধু পুলিশের ভুমিকা রাখলে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসী ও পরিবারের পক্ষ থেকে নজর রাখতে হবে। তারা আমাদের তথ্য দিতে পারে। এতে আমাও সহজে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *